নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়

সংগৃহীত ছবি
অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ :নিউমোনিয়া হলো লাঙস বা ফুসফুসের জটিল সংক্রমণ। বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি হওয়া কিংবা সংক্রমণ হওয়া থেকে একটু বেশি গুরুতর সংক্রমণকেই নিউমোনিয়া বলে। প্রতি বছর নিউমোনিয়াজনিত রোগের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.৬ মিলিয়নের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্বে প্রতি মিনিটে নিউমোকক্কাল রোগে ৩ জনের মৃত্যু হয়।

 

নিউমোকক্কাল আশঙ্কা কাদের-

যে কোনো মানুষের নিউমোকক্কাল রোগে হতে পারে। তবে যাদের বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি যাদের ফুসফুস, হার্ট কিডনির রোগ ডায়াবেটিস রয়েছে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে তাদের এই রোগ ও রোগজনিত জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। মাদকাসক্তরাও এই রোগের শিকার হয় সহজে। ইমিউনিটিকম থাকলে ব্যাক্টেরিয়া এবং ফাঙ্গাল দুই রকম নিউমোনিয়াই হতে পারে।

 

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ-

প্রধানত জ্বর থাকে। জ্বর খুব বেশি হয়, ঘাম হয় খুব, কাশি থাকে, কাশির সঙ্গে কফ বেরোতে পারে, কফের সঙ্গে রক্ত থাকতে পারে। বুকে ব্যথা- এমন ব্যথা যে কাশলে বা জোরে শ্বাস নিলে ব্যথা বেড়ে যায়। একে বলে পুরাইটিক চেস্ট পেইন। অনেক সময় লুজ মোশন বা ডায়রিয়া হতে পারে। যাদের বয়স একটু বেশি সিজন চেঞ্জের সময় নিউমোনিয়া সাধারণত তাদের বেশি দেখা যায়। নিউমোনিয়ার আরেকটি ধরন আছে। যেমন- অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া। এটি একটি বিশেষ ধরনের অবস্থা হলে হয়ে থাকে। যেমন যারা গিলতে ঠিকমতো পারে না অর্থাৎ ঢোক গেলার মতো অবস্থায় নেই বা যাদের রেসপিরেটরি মাসল দুর্বল তাদের অনেক সময় খাবার লাঙসে চলে যায় এবং লাঙসে একটা ইনফেকশন তৈরি করে নিউমোনিয়ার মতো একটা অবস্থা সৃষ্টি করে।

 

ডায়াগনোসিসের প্রথম ধাপ-

প্রথম ধাপ হলো চেস্ট এক্স-রে। বুকের এক্স-রে-তে যদি প্যাঁচ থাকে তাহলে নিউমোনিয়া আছে বলে ধরতে হবে। নিউমোনিয়ার ডায়াগনোসিসের সঙ্গে সঙ্গে এটাও জরুরি রোগটি কতটা সিভিয়ার। এটা মাপার জন্য স্কোর করা যায়। CURB-65 Scrce করা হয়। এছাড়াও দেখা হয় রোগীরা ইউরিয়া লেভেল কত, ডিসওরিয়েন্টেশন আছে কিনা। যদি রোগীর অবস্থা ঠিক না থাকে তবে হাসপাতালে ভর্তি করতেই হবে।

 

নিউমোনিয়ার কারণে নানা সমস্যা হতে পারে। যেমন কিডনির ওপর এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। লিভার ফাংশন এবং ব্লাড প্রেশারের ওপর এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সুতরাং সবদিক মাথায় রেখে একজন চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা করে থাকেন। এছাড়া খুব যত্ন সহকারে অ্যান্টিবায়োটিক নির্ণয় করতে হয়। কাজ না হলে বারবার পরিবর্তন করার দরকার পড়ে। রোগীর আত্মীয়রা ভাবেন চিকিৎসক বারবার অ্যান্টিবায়োটিক পরিবর্তন করছেন কেন। কিন্তু এটা দরকার। কারণ বেশির ভাগ সময় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স থাকে।

 

প্রতিরাধ-

নিউমোকক্কাল রোগ প্রতিরোধ করতে পারে এমন টিকা রয়েছে। অবহেলা না করে জ্বর, সর্দি-কাশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

লেখক : বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেস্ট সেন্টার, মগবাজার ওয়্যারলেস, ঢাকা।
সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দূর করার দায়িত্ব সরকারের : জয়নুল আবদিন ফারুক

» ন্যুনতম খাবারও দেওয়া হচ্ছে না ফিলিস্তিনি বন্দিদের

» ঘুম থেকে উঠে দেখি ফেসবুক আইডি ডিজেবল: ভিপি প্রার্থী আবিদ

» সুপ্রভাত বিষন্নতা

» প্রয়োজন ৩০ বিলিয়ন ডলার, ২ বিলিয়ন আনতেই ‘জান বের হয়ে যায়’

» পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে একটি গোষ্ঠী সাইবার অ্যাটাক দিচ্ছে : ছাত্রদল

» শ্বাসকষ্ট বেড়েছে নুরের, হাসপাতালে ভিড় না করার অনুরোধ

» বিশেষ অভিযানে মোট ১ হাজার ৬৭৭ জন গ্রেফতার

» ট্রাম্পের ‘শেষ সতর্কবার্তার’ পর আলোচনায় আগ্রহী হামাস

» ডাকসু নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই: ডিএমপি

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়

সংগৃহীত ছবি
অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ :নিউমোনিয়া হলো লাঙস বা ফুসফুসের জটিল সংক্রমণ। বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি হওয়া কিংবা সংক্রমণ হওয়া থেকে একটু বেশি গুরুতর সংক্রমণকেই নিউমোনিয়া বলে। প্রতি বছর নিউমোনিয়াজনিত রোগের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.৬ মিলিয়নের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্বে প্রতি মিনিটে নিউমোকক্কাল রোগে ৩ জনের মৃত্যু হয়।

 

নিউমোকক্কাল আশঙ্কা কাদের-

যে কোনো মানুষের নিউমোকক্কাল রোগে হতে পারে। তবে যাদের বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি যাদের ফুসফুস, হার্ট কিডনির রোগ ডায়াবেটিস রয়েছে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে তাদের এই রোগ ও রোগজনিত জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। মাদকাসক্তরাও এই রোগের শিকার হয় সহজে। ইমিউনিটিকম থাকলে ব্যাক্টেরিয়া এবং ফাঙ্গাল দুই রকম নিউমোনিয়াই হতে পারে।

 

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ-

প্রধানত জ্বর থাকে। জ্বর খুব বেশি হয়, ঘাম হয় খুব, কাশি থাকে, কাশির সঙ্গে কফ বেরোতে পারে, কফের সঙ্গে রক্ত থাকতে পারে। বুকে ব্যথা- এমন ব্যথা যে কাশলে বা জোরে শ্বাস নিলে ব্যথা বেড়ে যায়। একে বলে পুরাইটিক চেস্ট পেইন। অনেক সময় লুজ মোশন বা ডায়রিয়া হতে পারে। যাদের বয়স একটু বেশি সিজন চেঞ্জের সময় নিউমোনিয়া সাধারণত তাদের বেশি দেখা যায়। নিউমোনিয়ার আরেকটি ধরন আছে। যেমন- অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া। এটি একটি বিশেষ ধরনের অবস্থা হলে হয়ে থাকে। যেমন যারা গিলতে ঠিকমতো পারে না অর্থাৎ ঢোক গেলার মতো অবস্থায় নেই বা যাদের রেসপিরেটরি মাসল দুর্বল তাদের অনেক সময় খাবার লাঙসে চলে যায় এবং লাঙসে একটা ইনফেকশন তৈরি করে নিউমোনিয়ার মতো একটা অবস্থা সৃষ্টি করে।

 

ডায়াগনোসিসের প্রথম ধাপ-

প্রথম ধাপ হলো চেস্ট এক্স-রে। বুকের এক্স-রে-তে যদি প্যাঁচ থাকে তাহলে নিউমোনিয়া আছে বলে ধরতে হবে। নিউমোনিয়ার ডায়াগনোসিসের সঙ্গে সঙ্গে এটাও জরুরি রোগটি কতটা সিভিয়ার। এটা মাপার জন্য স্কোর করা যায়। CURB-65 Scrce করা হয়। এছাড়াও দেখা হয় রোগীরা ইউরিয়া লেভেল কত, ডিসওরিয়েন্টেশন আছে কিনা। যদি রোগীর অবস্থা ঠিক না থাকে তবে হাসপাতালে ভর্তি করতেই হবে।

 

নিউমোনিয়ার কারণে নানা সমস্যা হতে পারে। যেমন কিডনির ওপর এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। লিভার ফাংশন এবং ব্লাড প্রেশারের ওপর এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সুতরাং সবদিক মাথায় রেখে একজন চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা করে থাকেন। এছাড়া খুব যত্ন সহকারে অ্যান্টিবায়োটিক নির্ণয় করতে হয়। কাজ না হলে বারবার পরিবর্তন করার দরকার পড়ে। রোগীর আত্মীয়রা ভাবেন চিকিৎসক বারবার অ্যান্টিবায়োটিক পরিবর্তন করছেন কেন। কিন্তু এটা দরকার। কারণ বেশির ভাগ সময় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স থাকে।

 

প্রতিরাধ-

নিউমোকক্কাল রোগ প্রতিরোধ করতে পারে এমন টিকা রয়েছে। অবহেলা না করে জ্বর, সর্দি-কাশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

লেখক : বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেস্ট সেন্টার, মগবাজার ওয়্যারলেস, ঢাকা।
সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com